রাস্পবেরি পাই

by 12:13 AM 0 comments

 রাস্পবেরি পাই

পাঠ্যবিষয়কে সহজবোধ্য এবং বাস্তবরূপে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য স্মার্ট ক্লাসরুমের ধারণা আজকাল খুব জনপ্রিয়। একটি স্মার্ট ক্লাসরুমে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর এবং কম্পিউটারের মাধ্যমে কাগুজে পাঠ্যবিষয়কে ডিজিটাল রূপে উপস্থাপন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে স্মার্ট ক্লাসরুম বহুল প্রচলিত হলেও স্কুল পর্যায়ে এটি আমাদের দেশে খুব একটা প্রচলিত না। একটি বিদ্যালয়ের জন্য আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে স্মার্ট ক্লাসরুম তৈরি করা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তাহলে কি আমাদের দেশের বিদ্যালয়গুলোতে স্মার্ট ক্লাসরুম তৈরি করা সম্ভব না? এক্ষেত্রে আমরা বলতে পারি যুক্তরাজ্য ভিত্তিক Raspberry  Pi  Foundation  এর তৈরি মিনি কম্পিউটার Raspberry  Pi  এর কথা।

  • রাস্পবেরী পাই কীঃ

রাস্পবেরী পাই হচ্ছে ক্রেডিট কার্ড আকৃতির সিঙ্গেল বোর্ড কম্পিউটার। যুক্তরাষ্ট্রের রাস্পবেরি পাই ফাউন্ডেশন কর্তৃক এই মিনি কম্পিউটারটি মূলত তৈরি করা হয় স্কুলের বাচ্চাদের বেসিক কম্পিউটার বিজ্ঞানের সাথে পরিচিত করার জন্য। ক্রেডিট কার্ড সাইজের এই কম্পিউটারকে মনিটর , মাউস এবং কি-বোর্ডের সাথে সহজেই যুক্ত করে কাজ করা যায়।


রাস্পবেরি পাই কম্পিউটার
রাস্পবেরি পাই কম্পিউটার


রাস্পবেরি পাই একটি সাধারণ ডেস্কটপ কম্পিউটারের মতোই, এটি দিয়ে ইন্টারনেট ব্রাউজ করা ছাড়াও গেম খেলা, ওয়ার্ড প্রসেসিং ইত্যাদি কাজ করা যায়। আর প্রোগ্রামিং শেখার জন্যও এটি বেশ উপযোগি, কারণ পাইথন, স্ক্রাচ, সি ইত্যাদি প্রোগ্রামিং ভাষায় এতে প্রোগ্রামিং করা যায়। রাস্পবেরি পাই কম্পিউটারের মূল আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে, এর মূল্য সাধারণের একদম হাতের নাগালে, মাত্র ৩৫ ডলারে পাওয়া যায় ক্ষুদে এই কম্পিউটারকে।

  • ইতিহাসঃ

স্কুলের বাচ্চাদের জন্য ছোট্ট এবং স্বল্পমূল্যের কম্পিউটার তৈরির চিন্তা-ভাবনা শুরু হয় ২০০৬ সালে। তখন ইবেন আপটন, রব মুলিন্স, জ্যাক ল্যাং এবং এ্যালান মাইক্রফট্‌ ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাবরেটরিতে কাজ করার সময় লক্ষ্য করেন যে “এ লেভেল” শ্রেণীতে পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের কম্পিউটার বিজ্ঞান সম্পর্কে জানার আগ্রহ এবং কম্পিউটার সায়েন্সের দক্ষতা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। যেখানে নব্বই দশকের আবেদনকারী ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল শখের অভিজ্ঞ প্রোগ্রামার , সে পরিস্থিতি বিবেচনার ২০০০ সালের দিকে ক্যামব্রিজে আবেদনকারীর অধিকাংশই সামান্য ওয়েব ডিজাইন ছাড়া কিছুই জানত না। তখন হোম কম্পিউটার জনপ্রিয় হওয়ায় এবং স্কুলের আইসিটি কারিকুলামের আমূল পরিবর্তন হওয়ায় বাচ্চারা গেমস, ওয়ার্ড, এক্সেল, টুকটাক ওয়েবপেজ ডিজাইনের দিকে বেশি ঝুঁকে পরে। ফলে কমোডোর 64, স্পেকট্রাম জেডএক্স, বিবিসি মাইক্রো ইত্যাদি যেসব মেশিন দিয়ে পূর্বে প্রোগ্রামিং এর চর্চা হতো সেগুলোর জনপ্রিয়তা কমতে থাকে।

কম্পিউটার সায়েন্সের জনপ্রিয়তা স্কুল পর্যায়ে বৃদ্ধি করার জন্য ২০০৬ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত রাস্পবেরী পাই এর বিভিন্ন প্রোটোটাইপ তৈরি করা হয়। ২০০৮ সালে যখন মোবাইলে ডিভাইসের জন্য ব্যবহার উপযোগী প্রসেসর শক্তিশালী এবং সহজলভ্য হয়, তখন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাবরেটরীর চার বিজ্ঞানী  ইবেন, রব, জ্যাক ও অ্যালান,  হার্ডওয়্যার প্রস্তুতকারক কোম্পানি নরকট টেকনোলজির ব্যবস্থাপনা পরিচালক পিটে লোমাস এবং বিবিসি মাইক্রো গেম এলিটের সহ প্রণেতা ডেভিড ব্রাবেন একসঙ্গে মিলে ২০০৮ রাস্পবেরী পাই ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। রাস্পবেরী পাই ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার তিন বছর পর রাস্পবেরি পাই মডেল বি ব্যাপকভাবে প্রস্তুত করা শুরু হয় এবং দুই বছরে রাস্পবেরি পাই এর এই মডেলটি দুই মিলিয়নেরও বেশি বিক্রি হয়।

রাস্পবেরি পাই বি মডেল
রাস্পবেরি পাই বি মডেল
 

  •  বৈশিষ্ট্যঃ

রাস্পবেরি পাই এর প্রথম সংস্করণ রাস্পবেরি পাই বি এর ছিলো ৫১২ মেগাবাইট র‍্যাম, দুটি ইউএসবি পোর্ট এবং ১০০ মেগাবিট ইথারনেট পোর্ট। ২০১৪ সালের জুলাই মাসে রাস্পবেরি পাই বি+ বাজারে আসে। যেটিতে রয়েছে আগের মডেলের থেকে অতিরিক্ত ইউএসবি পোর্ট, মাইক্রো এসডি কার্ড স্লট, উন্নত শব্দ এবং ৩.৫ মিলিমিটার ভিডিও জ্যাক।


প্রয়োজনীয় সকল সংযোগসহ একটি রাস্পবেরি কম্পিউটার
প্রয়োজনীয় সকল সংযোগসহ একটি রাস্পবেরি কম্পিউটার


রাস্পবেরি পাই কম্পিউটারের মূল বৈশিষ্ট্য হলো এর মোবিলিটি। কার্ড সাইজের আকৃতি হওয়ায় এই কম্পিউটারকে অনায়সে পকেটে করে বহন করা যায়। প্রয়োজনমত মনিটর, মাউস, কিবোর্ডের সাথে যুক্ত করলেই হয়ে যায় ডেস্কটপ কম্পিউটার। শিক্ষার্থীদের কম্পিউটারের কার্যপদ্ধতি বোঝানোর জন্য রাস্পবেরি পাই তৈরি করা হলেও ইনপুট/আউটপুট  পোর্ট থাকার কারণে একে আরডুইনো উনোর বিকল্প হিসেবে রোবটিক্স এ ব্যবহার করা যায়।

একই সাথে একে পোর্টেবল পিসি ও প্রোগ্রামেবল আই সি হিসেবে ব্যাবহার  করা যায় বলে রাস্পবেরি পাই  হ্যাকারদের কাছে অসীম সম্ভবনার দরজা খুলে দেয়। লিনাক্সভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম হওয়ায় এর অপারেটিং সিস্টেমের জন্য বাড়তি কোনো মূল্যও পরিশোধ করতে  হয় না, কারণ লিনাক্সভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম একটি মুক্ত ও বিনামূল্যে প্রাপ্ত অপারেটিং সিস্টেম। আর অপারেটিং সিস্টেম মুক্ত হওয়ায় আমরা এর পরিবর্তন ও পরিমার্জনও করতে পারি সহজেই। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই রাস্পবেরি পাই-এর মনিটর হিসেবে টেলিভিশনও ব্যবহার করা যায়।

২০১৫ সালে বাজারে এসেছে রাস্পবেরি পাই ২। রাস্পবেরি পাই কম্পিউটারের  এই সংস্করণের কোয়াড কোর এআরএম প্রসেসর পূর্বের সংস্করণের চেয়ে ৬ গুন বেশি শক্তিশালী। রাস্পবেরি পাই এর আগের সংস্করণ রাস্পবেরি পাই বি+ এর কিছু ফিচার পরিবর্তনের পাশাপাশি এই সিরিজে পাওয়া যাবে চারটি ইউএসবি পোর্ট এবং মাইক্রো এসডি কার্ড স্লট। এছাড়াও রাস্পবেরি পাই ২ সংস্করণ কিনলে সাথে বিনামূল্যে পাওয়া যাবে উইনডোজ ১০ অপারেটিং সিস্টেম।



রাস্পবেরি পাই মডেল বি এবং রাস্পবেরি পাই মডেল বি+
রাস্পবেরি পাই মডেল বি এবং রাস্পবেরি পাই মডেল বি+

বাংলাদেশে রাস্পবেরি পাইঃ

  • বাংলা পাই প্রকল্পঃ

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত ও কম্পিউটার কৌশল বিভাগের বাংলাদেশি ছাত্র তারিক আদনান বাংলা পাই প্রকল্পের মাধ্যমে তৃতীয় বিশ্বের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি স্বল্পমূল্যের কম্পিউটার তৈরির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। প্রাথমিকভাবে বাংলা পাই প্রকল্পের কম্পিউটারে রাস্পবেরি পাই ব্যবহার করা হয়েছে যেটির রয়েছে ৯০০ মেগাহার্টজ্‌ গতির প্রসেসর এবং ৫১২ মেগাবাইট র‍্যাম। শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় সকল কাজ এই বাংলা পাই কম্পিউটার দিয়ে করা সম্ভব। এতে রয়েছে লেখালেখির সফটওয়্যার, প্রোগ্রামিং শেখার স্ক্র্যাচ সিস্টেম, পাইথনের কম্পাইলার, গান ও ভিডিও চালানোর সফটওয়্যার, বেশ কযেকটি গেমস এবং ওয়েবসাইট দেখার সফটওয়্যারসহ নানা কিছু। বাংলা পাই কম্পিউটারের মনিটর হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে কাঠের ফ্রেম ও ১০.১ ইঞ্চি এলসিডি প্যানেল। সমগ্র এই কম্পিউটার ব্যবস্থা তৈরিতে খরচ হয় মাত্র ৬,২০০ টাকা ।

  • রাস্পবেরি পাই ক্লাস্টার কম্পিউটারঃ

গত মাসে (মে ২০১৫) রাস্পবেরি পাই দিয়ে বাংলাদেশে প্রথমবারের মত ক্লাস্টার কম্পিউটার তৈরি করেছেন সিলেটের মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষক-শিক্ষার্থী।
রাস্পবেরি পাই দিয়ে ক্লাস্টার কম্পিউটার তৈরি প্রকল্পের সুপারভাইজার ছিলেন মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের লেকচারার সৈয়দ রেজওয়ানুল হক নাবিল।
মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দলটি স্বল্প খরচে ক্লাস্টার কম্পিউটার তৈরি করেছে। এখানে ৪টি রাস্পবেরি পাই কম্পিউটার একত্রিত করে ক্লাস্টার কম্পিউটারটি বানানো হয়েছে। তবে চাইলে ৩২টি কম্পিউটার একসঙ্গে করা যাবে।


রাস্পবেরি পাই দিয়ে তৈরি ক্লাস্টার কম্পিউটার
রাস্পবেরি পাই দিয়ে তৈরি ক্লাস্টার কম্পিউটার


বর্তমানে রাস্পবেরি পাই দিয়ে তৈরি এই ক্লাস্টার কম্পিউটারটি মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনোভেশন ল্যাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
রাস্পবেরি পাই সিঙ্গেল বোর্ড কম্পিউটারটি বাংলাদেশে এখন বেশ সহজলভ্য। বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটে এটি পাওয়া যাচ্ছে । এছাড়াও ফেসবুকে রাস্পবেরি পাই নিয়ে উৎসাহী লোকজনদের জন্য রাস্পবেরি পাই বাংলাদেশ নামক একটি পেজ রয়েছে যেখানে রাস্পবেরি পাই কম্পিউটার সংক্রান্ত বিষয়াদি সম্পর্কে জানা যাবে সহজেই।

Unknown

Developer

Cras justo odio, dapibus ac facilisis in, egestas eget quam. Curabitur blandit tempus porttitor. Vivamus sagittis lacus vel augue laoreet rutrum faucibus dolor auctor.

0 comments:

Post a Comment